এডিট করা ভিডিও: নুরের বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার
ভাইরাল ভিডিওতে দেখানো হয়েছে নুর মামলার বাদী মেয়েটির সাথে সাক্ষাতের কথা স্বীকার করেছেন; আদৌ সত্য নয়।
১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে তার এবং তার এক সময়ের সহকর্মী হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাম্প্রতিক একটি মামলার বিষয়ে তিনি দুটি আলাদা ভিডিওতে স্ববিরোধী কথা বলছেন।
ফেসবুকে ছড়ানো এমন একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
আর্কাইভকৃত কয়েকটি লিংকে দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর প্রথম থেকে ২৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ে নুর বলেছেন--
"হাসান আল মামুনের সাথে ওই ছাত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্রী, তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং হাসান আল মামুনের কথায় তার বাসায় যায় এবং বাসায় গেলে হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ২৪ তারিখ ঢাকার নীলক্ষেতে সেই মেয়েটির সাথে আমরা এই বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য বসেছিলাম।"
এর পরের অংশে নুর বলেছেন--
"এই শিক্ষার্থী আমার কাছে কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমার কাছে দুই থেকে আড়াই মাস আগে একবার ফোন দিয়েছিলো জাস্ট যে ভাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হলে থাকি। আমি একটু সমস্যায় পড়েছি আপনার একটু সহযোগিতা চাই। আমি বলেছি যে ঠিক আছে তুমি কী ধরনের সমস্যায় পড়েছো বলো আমি সহযোগিতা করবো। সে বলেছে যে আমি এখন ময়মনসিংহ আছি ঢাকায় এসে আমি আপনার সাথে দেখা করবো এবং আমি আপনাকে বিষয়টি খুলে বলবো। কিন্তু সে কিন্তু ওই একদিন ফোন দিয়েছে তারপরে ঢাকা এসেছে কিনা আমাকে কিন্তু আর কখনোই ফোন দেয়নি, আমার সাথে তার আর কথাও হয়নি।"
ভিডিওটির দুই অংশে নুর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এক জায়গায় শোনা যাচ্ছে তিনি বলেছেন, হাসান আল মামুনের বাসায় যায় মেয়েটি এবং সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়। আর ২৪ সেপ্টেম্বর নুরের সাথে নীলক্ষেতে মেয়েটির সাক্ষাতের বিষয়টিও স্বীকার করেছেন তিনি।
অন্যদিকে ভিডিও পরের অংশে দেখা যাচ্ছে তিনি অস্বীকার করছেন তার সাথে মেয়েটির দেখা হয়নি। এই স্ববিরোধী বক্তব্যকে বুঝাতে ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে টেক্সট যুক্ত করা হয়েছে- "ভন্ড নুরার পল্টিবাজি"।
ফ্যাক্ট চেক:
যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এডিট করা। দীর্ঘ একটি ভিডিওর বিভিন্ন অংশ কেটে অপ্রাসঙ্গিকভাবে নানান অংশ যুক্ত করে বানানো হয়েছে নুরের স্বীকারোক্তির ভিডিওটি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর প্রথম ২৬ সেকেন্ডের ক্লিপটি নেয়া হয়েছে Nurul Haque Nur নামক একটি পেইজ থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সম্প্রচারিত নুরুলহক নুরের একটি 'লাইভ' বক্তব্যের ভিডিও থেকে।
২৩ সেপ্টেম্বরের লাইভ ভিডিওর ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ০৬ সেকেন্ড পর্যন্ত নুর বলেছেন--
"...যে বিষয়টি আপনারা অবগত আছেন যে গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী তিনি লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করলেন । তার মামলায় যে বিষয়গুলো আরকি তিনি তুলে ধরেছেন , আমি এজাহারে যতটুকু পড়েছি, লালবাগ থানার অভিযোগে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যে আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে ১ নাম্বার আসামী করেছেন যে, হাসান আল মামুন তাকে; হাসান আল মামুনের সাথে ঐ ছাত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী, তার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো এবং হাসান আল মামুনের কথায় তার বাসায় যায় এবং বাসায় গেলে হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।"
নুরের ২৩ সেপ্টেম্বরের লাইভ ভিডিওর ৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড থেকে ৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত তিনি আরও বলেন--
"..এটি এ কারণে বলছি যে, তার কথা বার্তি (বার্তা) এবং এজাহারে যে ঘটনাগুলি তিনি যেভাবে উল্লেখ করেছেন তার সাথে তেমন মানে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। এটা গেলো লালবাগ থানার মামলা এজাহারে যিনি লিখেছেন যেভাবে লিখেছেন সেগুলো নিয়ে একটু বললাম। সেখানে তিনি বলেছেন, আমার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভিপি নুরের কাছে তিনি অভিযোগ দিয়েছিলেন যেহেতু হাসান আল মামুন ছাত্র অধিকার পরিষদ করে, ভিপি নুরের সংগঠন করে সেখানে তার কাছে বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু ভিপি নুর তার বিচার না করে সময় কালক্ষেপণ করেছেন এবং তাকে হুমকি দিয়েছেন । তাকে পতিতা বলে অনলাইনে প্রচার করান বা অনলাইনে হ্যারাজমেন্টের হুমকি দিয়েছিলেন এবং ২৪ তারিখ ঢাকার নীলক্ষেতে সেই মেয়েটির সাথে নাকি আমরা এই বিষয়টা মিমাংসা করার জন্য বসেছিলাম।"
লাইভ সম্প্রচারিত ভিডিওর এই দুটি অংশ থেকে কেটে এডিট করা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে নুর বলছেন--"হাসান আল মামুনের সাথে ওই ছাত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ছাত্রী, তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং হাসান আল মামুনের কথায় তার বাসায় যায় এবং বাসায় গেলে হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। ২৪ তারিখ ঢাকার নীলক্ষেতে সেই মেয়েটির সাথে আমরা এই বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য বসেছিলাম।"
অর্থাৎ, নুর যে বক্তব্যে তার এবং হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে উল্লেখ করা এজাহারের অভিযোগগুলো তুলে ধরেছেন সেই বক্তব্যের আগের, পরের এবং মাঝখানের কিছু অংশ বাদ দিয়ে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে মনে হতে পারে নুর নিজের এবং হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে করা বাদীর অভিযোগগুলো স্বীকার করে নিচ্ছেন।
নুরের লাইভ ভিডিওর লিংক।
আর ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ২৭ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত ভিন্ন আরেকটি ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে। সেটি সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে "DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়" নামক ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছিল।