পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারের একটি ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, অস্ত্র উদ্ধারের এই ঘটনাটি ১ জুলাই কক্সবাজারের, এর সাথে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে সুপারির বস্তা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের হাতে পৌঁছাতে এই অস্ত্রগুলো চালান করা হচ্ছিল। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৮ জুলাই 'Najmul Hassan' নামের একটি আইডি থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়, "ছাত্রশিবির মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ইকনো ডিএক্স কলম নিয়ে যাচ্ছে বাহারি তরিকায়। সামনে পরীক্ষা প্রচুর লিখতে হবে। কলমটি বহুকাল মাটির নিচে ছিলো। চট্টগ্রামেরই ঘটনা।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে জামায়াত-শিবির জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে সরকার। তাই এই সময়ে অস্ত্র পাচার সংক্রান্ত আলোচ্য দাবিটি ছাত্রশিবির ও কোটা সংস্কার আন্দোলন উভয়কেই ইঙ্গিত করছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাথে অস্ত্র উদ্ধারের আলোচ্য ভিডিওটির কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি গত ১ জুলাই কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে সুপারির বস্তার ভিতরে করে পাচারকালে বিদেশি রাইফেল, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধারের।
আলোচ্য ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "ম্যাগাজিনসহ বিদেশী অস্ত্র ও গুলি মিললো সুপারির বস্তায়" শিরোনামে সম্প্রচার মাধ্যম আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি চলতি বছরের ২ জুলাই প্রকাশ করা হয়। উক্ত ভিডিওর সঙ্গে আলোচ্য ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি দেখুন--
পরবর্তীতে আলোচ্য শিরোনাম ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "সুপারির বস্তাতে মিলল বিদেশি পিস্তলসহ গুলি, যুবক আটক" শিরোনামে সময়ের আলো পত্রিকার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি চলতি বছরের ১ জুলাই প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "টেকনাফ কেন্দ্রিক অবৈধ অস্ত্র ও গুলি বেচাকেনায় জড়িত সংঘবদ্ধ একটি চক্র সক্রিয় থাকার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সন্দেহজনক বিভিন্ন স্থানে নজরদারি শুরু করে। পরে সাড়াশি অভিযানের এক পর্যায়ে সন্দেহজনক একটি মিনিট্রাক সেখানে পৌঁছালে পুলিশ সদস্যরা থামার জন্য নির্দেশ দেন। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তি কৌশলে পালানোর চেষ্টা চালায়। পরে ধাওয়া দিয়ে একজনকে আটক করে।" এছাড়াও এই প্রতিবেদনে ওসির বরাতে বলা হয়, উদ্ধার করা অস্ত্র ও গুলি কোথা থেকে আনা হয়েছে এবং কোথায় পাচার হচ্ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফেসবুকে আলোচ্য দাবিতে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট (বামে) এবং আরটিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওর (ডানে) স্ক্রিনশট দেখুন পাশাপাশি--
এছাড়া, গত ১ জুলাই আজকের পত্রিকার অনলাইন ভার্সনেও একই সংবাদ প্রকাশিত হয় সেখানেও কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনির বরাতে বলা হয়, "উদ্ধার করা অস্ত্র ও গুলি কোত্থেকে আনা হয়েছে এবং কোথায় পাচার হচ্ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার ব্যক্তির বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ উদ্ধারকৃত এসব অস্ত্র কোথা থেকে এসেছে ও কোথায় পাচার করা হচ্ছিল এ বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে জানাতে পারেনি। তাই আলোচ্য ভিডিওটির অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাটির সাথে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক আছে তা বলা যায়না।
উল্লেখ্য চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে জামায়াত-শিবির জড়িত বলে সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গণহত্যার অভিযোগ করেছে জামায়াত।
সুতরাং কক্সবাজারে টেকনাফে গত ১ জুলাই পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারের একটি ভিডিও দিয়ে এসব অস্ত্র ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের জন্য পাচার করা হচ্ছিল বলে ফেসবুকে ভিত্তিহীন প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।