সিসকো, মটোরালা, এইচপি কি ইসরায়েল-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান?
সময় টিভিতে প্রকাশিত একটি মতামতে একাধিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত একাধিক অনলাইন পোর্টালের দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে রয়েছে ইসরায়েলের যন্ত্রাংশ। দেখুন এমন কিছু পোস্টের লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সময় টিভি অনলাইনে একটি মতামত প্রকাশিত হয় যেখানে বেশকিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয় দাবি করা হয়, এরা সকলেই ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া দাবি করা হয় প্রয়োজনের স্বার্থে যেকোনো প্রযুক্তি যেকোনো দেশ থেকে কিনতে পারে বাংলাদেশ। দেখুন সেই লেখাটির স্ক্রিনশট-
এছাড়া উক্ত কলামটির একটি ভিডিও ভার্সনও সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাচ্ছে। দেখুন স্ক্রিনশট-
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান করে দেখেছে, উক্ত মতামতে প্রকাশিত একাধিক তথ্য ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। উক্ত মতামত/কলামে একাধিক বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, এসকল প্রতিষ্ঠান ইসরায়েল-ভিত্তিক। যেমন সেখানে লেখক বলেন, 'জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট Cisco এবং Junipar এর নির্মাতা ইসরায়েল'। কিন্তু Cisco এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। এছাড়া আরেকটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান Juniper (সেখানে বানানটি ভুল ছিল) এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। দেখুন স্ক্রিনশট--
এছাড়া আরেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়, 'জনপ্রিয় মোবাইল ফোন নির্মাতা Motorola ইসরায়েলের একটি প্রোডাক্ট'। কিন্তু মটোরালা কোম্পানিটির অফিশিয়াল সাইটে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ তাদের ১২টির অধিক কার্যালয় আছে, কিন্তু সেখানে ইসরায়েলের কোনো নাম পাওয়া যায়নি।
'HP প্রিন্টার' সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়, উক্ত প্রতিষ্ঠানটিও ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে তাদের বর্ণিত সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। বরং ১৯৩৯ সালে দুইজন মার্কিন নাগরিক বিল হ্যাওলেট এবং ডেভ প্যাকার্ড নিজেদের নামে Hewlett-Packard (HP) প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। অনেক পরে ২০০১ সালে তারা ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান Indigo কিনে নেন। দেখুন সে সংক্রান্ত একটি খবর এই লিংকে।
দ্বিতীয়ত আলোচ্য লেখাটির শেষাংশে দাবি করা হয়, 'প্রয়োজনের স্বার্থে সরাসরি কিংবা ভায়া মাধ্যমে যেকোনো দেশের প্রযুক্তিই আমরা কিনতে পারি। সেক্ষেত্রে অন্যায়ের কিছু নেই'। কিন্তু প্রথম আলোয় প্রকাশিত 'বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি, পণ্য অজানা!' শিরোনামের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলে রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিপাক্ষিক কোনো বানিজ্য করা আইনত বৈধ নয়। উক্ত প্রতিবেদনে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, 'ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ...কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বাণিজ্য হয় না। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে রপ্তানি হতে পারে বলে জানান তিনি।
অর্থাৎ ব্যক্তিপর্যায়ে আমদানি-রপ্তানি সম্ভব হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো প্রকার বানিজ্য স্বীকৃত নয়।
সুতরাং সময় টিভিতে প্রকাশিত উক্ত মতামতটিতে একাধিক ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পাওয়া গেছে।