একনজরে ২০২০: মূলধারার মিডিয়ায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবরের উপস্থিতি কেমন?
বিদায়ী বছরে ছড়ানো মূলধারার মিডিয়ায় শীর্ষ দশটি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর সংবাদের সংক্ষিপ্ত একটি চিত্র তুলে ধরা হলো।
শেষ হতে চলেছে ২০২০ খৃষ্টাব্দ। করোনা মহামারীর সূচনা দিয়ে বছরের আগমন হয়েছিল, যার সাথে যোগ হয় লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন প্রভৃতি বিষয়াদি। একটা সময় মনে হয়েছিল পুরো বিশ্বই থমকে গিয়েছে। মানুষ হয়ে পড়েছিল বন্দি, সবখানেই খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যখাতকে হিমশিম খেতে হয়েছে মহামারী সামলাতে, যা এখনও চলমান আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও ভিন্ন কিছু ছিলনা। মহামারীর এই তীব্রতার সময়ে ভাইরাসের সাথে ভুয়া তথ্যও পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে কিছু ছিল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ও এবং কিছু ছিল অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত। এসব ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবরের একটা অংশ ছড়িয়েছে খোদ মূলধারার সংবাদমাধ্যম থেকে। আসুন এরকম কিছু ভুয়া খবর দেখে নেয়া যাক-
১. বৃটেনের রানীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর
করোনা মহামারীর প্রথম দিকে গত মার্চে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একটি খবর মূলধারার কিছু সংবাদমাধ্যমে আসে। ইউসিআর ওয়ার্ল্ড নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটে "Royal Palace confirms Queen Elizabeth tests positive for coronavirus" শিরোনামের একটি প্রতিবেদনকে সূত্র হিসেবে ধরে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ইউসিআর ওয়ার্ল্ড নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইট এর বরাতে এই খবরটি দিয়েছে জাগোনিউজ, জনকণ্ঠ, ইনকিলাবসহ আরও কিছু সংবাদমাধ্যম। বুম বাংলাদেশ দেখতে পায় খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
UCR World News-এ ২৭ মার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে রানীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাজপরিবার ২৭ মার্চ এমন কোনো বিবৃতি দেয়নি। বরং একই দিন রাজপরিবারের টুইটার একাউন্টে রানী ছবি ও সুস্থ্য থাকার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটেনের একাধিক সংবাদমাধ্যমও রাজপরিবারের টুইট ও নিজস্ব সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, রানীর করোনা ভাইরাস হননি, বা অন্তত তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি তার। তিনি সুস্থ্য আছেন।
বুম বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
২. করোনা সংক্রান্ত দেবী শেঠীর ২২ পরামর্শ
করোনাকালীন সময়ে মে মাসের দিকে করোনা থেকে বাঁচতে এক বছরের জন্য ডা: দেবী শেঠির ২২ টি পরামর্শ শীর্ষক একটি সংবাদ মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসে।
কিন্তু বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে এই সংবাদটির সত্যতা নেই। কারণ কোথাও কোন সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। সেই সাথে গুগল অনুসন্ধান করেও এরকম কোন তথ্য মেলেনি। তাছাড়া ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা দ্যা কুইন্টের একটি প্রতিবেদনে ডা: দেবী শেঠি নিজেও এরকম কোন পরামর্শ দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ব্লগ সেকশনে ডা: দেবী শেঠির একটি লেখা পাওয়া যায় যেখানে তিনি করোনাভাইরাস থেকে নিজে ও পরিবারকে বাঁচাতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যার সাথে সংবাদে আসা ২২ টি পরামর্শের যথেষ্ট পার্থক্য আছে।
দেবী শেঠির ২২টি পরামর্শ নিয়ে বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকটি দেখুন এখানে।
৩. করোনাভাইরাস প্রাকৃতিক নয়, মানুষের তৈরী
গত এপ্রিলে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে নোবেল জয়ী জাপানী বিজ্ঞানী তাসুকু হনজো বলেছেন করোনাভাইরাস প্রাকৃতিক নয়, বরং মানুষের তৈরী। বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে জাপানি যে বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতির কথা বলা হয়েছে তা আসলে ভুয়া। তাসুকু হনজো নিজেই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তাকে উদ্ধৃত করে যেসব বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে তা 'ভুয়া তথ্য ও ভুয়া অভিযোগ'।
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেলের বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটেই।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাসুকুর যে প্রোফাইল আছে তাতে উল্লেখ দেখা যায় তিনি কখনো চীনের কোনো ল্যাবে কাজ করেননি। বার্তা সংস্থা এএফপি-কেও একই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুমের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
৪. লকডাউনে' যাচ্ছে সূর্য, সতর্কতা জারি নাসার
গত মে মাসে দেশের মূলধারার কিছু সংবাদ মাধ্যমে "লকডাউনে' যাচ্ছে সূর্য, সতর্কতা জারি নাসার" শিরোনাম কিংবা কাছাকাছি শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। বুম বাংলাদেশ ফ্যাক্ট চেক করে দেখে যে, বিভিন্ন প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী ৬ টি দাবির কথা বলা হয়েছে।
দাবি ১: "মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যেই দুঃসংবাদ দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা।"
ফ্যাক্ট চেক করে দেখা যায় নাসার বিজ্ঞানীরা 'করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেই' 'দুঃসংবাদ' আকারে কোনো তথ্য দেননি। প্রতি ৯ থেকে ১৪ বছর সময়ের মধ্যে একটি 'সোলার সাইকেল' বা সৌরচক্র পূর্ণ হয়। সাধারণত এই সৌরচক্র পূর্ণ হতে ১১ বছর সময় লাগে। সৌরচক্রের এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুর্যের আলো বিকিরণ ক্ষমতা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। সৌরচক্রের মধ্যে বিকিরণ ক্ষমতা বেড়ে যখন সর্বোচ্চ হয় তখন সেটিকে 'সোলার মেক্সিমাম' এবং যখন বিকিরণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন হওয়াকে 'সোলার মিনিমাম' বলে। ২০১৭ সালের ২৭ জুন এক প্রতিবেদনে নাসা জানিয়েছিলো, চলতি সৌরচক্র বা সোলার সাইকেলের 'সোলার মিনিমাম' শুরু হতে পারে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। (অনুমিত সময়ের ৬ মাস আগে বা পরের যে কোনো সময়েও হতে পারে)। তবে চলতি 'সোলার মিনিমাম' বিগত 'সোলার মিনিমাম' এর চেয়ে কিছু বেশি সময় স্থায়ী হবে।
দাবি ২: "নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, "এবার লকডাউনে চলে গেছে সূর্য"। বাস্তবে সোলার মিনিমাম বুঝাতে নাসার বিজ্ঞানীরা 'লকডাউন' শব্দ তাদের নিবন্ধে ব্যবহার করেননি।
দাবি ৩: "সূর্যের এমন লকডাউনের ফলে বিশ্বে তাপমাত্রা কমে যাবে, শীতল হয়ে উঠবে পৃথিবী। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।" ১ নং দাবির ফ্যাক্ট চেকেই তুলে ধরা হয়েছে নাসা জানিয়েছে, সোলার মিনিমাম (যাকে 'সূর্যের লকডাউন' বলা হয়েছে প্রতিবেদনে) এর কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার শঙ্কা নেই, ফলে পৃথিবী শীতলও হবে না। আর 'বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ দেখা দিতে পারে' বলে যে দাবি করা হয়েছে তা নাসার বক্তব্য নয়।
দাবি ৪: "নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।" অথচ নিউইয়র্ক টাইমস এর কোনো প্রতিবেদনে এমন কোন তথ্য তুলে ধরা হয়নি। বরং উপরে উল্লিখিত দ্য সান এর প্রতিবেদন দ্য সান এর বরাতে পুনঃপ্রকাশ করেছে 'নিউইয়র্ক পোস্ট' নামে একটি পত্রিকা।
দাবি ৫: "বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস বলেন, আমরা এমন গভীরতম সময়ের ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, যে সময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে।" কিন্তু বাস্তবে দ্য সান (অথবা নিউইয়র্ক পোস্ট) এর প্রতিবেদনের কোথাও সরাসরি 'জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস' মুখে এমন কথা পাওয়া যায়নি।
দাবি ৬: "সূর্যের এই লকডাউনে যাওয়ার ঘটনায় 'ডাল্টন মিনিমাম' এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ১৭৯০ এবং ১৮৩০ এর মধ্যে সূর্যের মিনিমাম সোলারের কারণে তীব্র শীতের মুখে পড়েছিল পৃথিবী।" কিন্তু নাসার প্রতিবেদনগুলোতে 'ডাল্টন মিনিমাম' এর কথা এবং সেটির সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো দুর্ভিক্ষ-দুর্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এ সংক্রান্ত বুমের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
৫. যুক্তরাজ্যের বর্ষসেরা চিকিৎসক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারজানা
গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের মূলধারার একাধিক সংবাদমাধ্যমে "যুক্তরাজ্যের বর্ষসেরা চিকিৎসক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারজানা" শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর, জাগোনিউজ, বণিকবার্তা, সময়নিউজ এসব সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশের পর তা দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ফারজানা ও সাফল্য সংক্রান্ত যেসব দাবি করা হয়েছে তার কয়েকটি হলো-
#যুক্তরাজ্যের বর্ষসেরা চিকিৎসক (জিপি অব দ্য ইয়ার) মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারজানা হুসেইন।
#এজন্য তাকে সম্মান জানাতে বিলবোর্ডে টানানো হয়েছে তার ছবি।
#এবার তিনি জাতীয় পর্যায়েও জিপি বা বর্ষসেরা চিকিৎসক মনোনীত হলেন।
#পুরস্কারটি প্রদান করেছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সংস্থা দ্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)।
#যুক্তরাজ্যে বর্ষসেরা চিকিৎসকের বিলবোর্ডে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফারজানার স্থান হয়েছে।
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখে যে প্রথমত, ফারাজানা "যুক্তরাজ্যের বর্ষসেরা চিকিৎসক" নির্বাচিত হননি।
দ্বিতীয়ত, তার ছবি যুক্তরাজ্যে বিলবোর্ড স্থান পাওয়ার কারণ এটা নয় যে, তিনি 'বর্ষসেরা চিকিৎসক' নির্বাচিত হয়েছেন।
তৃতীয়ত, ফারজানা ২০১৯ সালে Pulse General Practitioner of the Year নামে একটি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন। এটি "যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সংস্থা দ্য ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস" কর্তৃক প্রদানকৃত কোনো "পুরস্কার" নয়। বরং ব্রিটেনের "জেনারেল প্রাকটিশনার"দের (চিকিৎসক) পেশাগত বিষয়াদি নিয়ে প্রকাশিত সাময়িকী "পালস ম্যাগাজিন" প্রতিবছর এই অ্যাওয়ার্ডটি প্রদান করে থাকে। এই অ্যাওয়ার্ডটি যুক্তরাজ্যের সব চিকিৎসকদের মধ্যে 'সেরা চিকিৎসক' নির্বাচিত করতে দেয়া হয় না। বরং দেশটিতে চিকিৎসকদের মধ্যে যে অংশকে 'জেনারেল প্রাকটিশনার' হিসেবে অভিহিত করা হয় তাদের মধ্য থেকে নানান বিবেচনায় ভালো পারফরমেন্স করা একজনকে এটি দেয়া হয়।
প্রকৃতপক্ষে, চলমান করোনা মহামারীতে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে যুক্তরাজ্যের ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ছবি তুলেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার John Rankin Waddell. এই ১২ জনের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ফার্মাসিস্ট, প্যারাম্যাডিকরাও রয়েছেন। ডাক্তার ফারজানা হোসাইন রানকিনের ফটো তোলা সেই ১২ জনের একজন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (এনএইচএস) তাদের ৭২ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে রানকিনের তোলা এসব ত্যাগী স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানাতে এই ১২ জনের ছবি নিজেদের ওয়েবসাইটে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডে প্রকাশ করেছে।
ডা: ফারজানাকে নিয়ে বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
৬. যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ইসলামপাঠ অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা বাইডেনের
জুলাই মাসে দৈনিক কালের কন্ঠে ''যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ইসলামপাঠ অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা বাইডেনের'' শিরোনামে সেসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী জো বাইডেন এর বরাতে একটি খবর প্রকাশিত হয়। এর সূত্র ধরে অন্যান্য অনেক পোর্টালও খবরটি প্রকাশ করে। কালের কন্ঠ সূত্র হিসেবে ডেইলী কলারের কথা উল্লেখ করে।
বুম বাংলাদেশ এই শিরোনাম ও খবরের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে যে, প্রথমত: দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত খবরের শিরোনামে বাইডেনের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ইসলামপাঠ অন্তর্ভুক্তির ঘোষণার কথা বলা হলেও মূল খবরে এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। দ্বিতীয়ত: ডেইলি কলার ''Biden: 'I Wish' Schools Taught More About 'Islamic Faith''' এই শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করেছে।
ডেইলি কলারের প্রতিবেদন অনুযায়ী জো বাউডেনের বক্তব্য ছিল এরকম- জো বাইডেন মনে করেন আমেরিকান স্কুলগুলোতে ইসলাম ধর্মের উপর আরো বেশি পাঠদান করা উচিত।
'এমগেজ অ্যাকশন' এর আয়োজিত 'মিলিয়ন মুসলিম ভোটস সামিট' শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় বক্তব্য রাখছিলেন যেখানে তিনি বলেন ''আমার তো মনে হয় যদি আমাদের স্কুলগুলোতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আমাদেরকে আরো শিখানো হত।''
বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
৭. ভিপি নূর ও ধর্ষণ মামলা
গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের মামলায় কোটা আন্দোলনের ছাত্র নেতা হাসান আল মামুনের সাথে অভিযোগকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় অভিযুক্ত হিসেবে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূরের নামে অভিযোগ করার পর বাংলাদেশী মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে "ডাকসু ভিপি নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বুম বাংলাদেশ খোঁজ নিয়ে দেখে যে, লালবাগ থানায় ২০ সেপ্টেম্বর যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটির এজহারে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুলহক নুরের বিরুদ্ধে 'ধর্ষণের' অভিযোগ করেননি অভিযোগকারী নারী। বরং হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে (মামুনের বাসায়) ধর্ষণ' করার অভিযোগ করেছেন। মামলায় মামুন ছাড়াও নুরসহ আরও ৫ জনকে আসামি করেছেন অভিযোগকারী নারী। এজহারে নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে ধর্ষণের ঘটনার বিচার চাওয়ার পরেও বিচার না করে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভিক্টিম নারীকে নানাভাবে চাপ দেয়ার।
বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
৮. ধর্ষণের নতুন আইনে টাঙ্গাইলে প্রথম মৃত্যুদণ্ডাদেশ
ধর্ষন বিরোধী আন্দোলন চলাকালে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে মাদ্রাসাছাত্রী গণধর্ষণের মামলায় আদালত পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একই সঙ্গে তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করার পর মূলধারার বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবী করা হয় যে ধর্ষণের নতুন আইনে টাঙ্গাইলে প্রথম মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত অক্টোবরে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০' এর ৯ (১) ধারা সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করা হয়। অর্থাৎ এই ধারায় বর্ণিত অপরাধ (ধর্ষণ) এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হলেও সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখে, টাঙ্গাইলের রায় হওয়া মামলাটি গণধর্ষণের অর্থাত একই আইনের ৯ (৩) ধারার অপরাধ। এই ধারায় গণধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে আগে থেকেই মৃত্যুদণ্ড ছিল। সুতরাং এটা নতুন আইনে প্রথম মৃত্যুদন্ডাদেশ ছিলোনা।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
৯. পল পগবার অবসর
গত অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের মূলধারার অনেক সংবাদমাধ্যমে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান এর বরাতে প্রচার করা হয় বিখ্যাত ফরাসি ফুটবলার পল পগবা জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। দাবী করা হয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন এর ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে তিনি এই অবসরের ঘোষণা দেন।
বুম বাংলাদেশ এর সত্যতা যাচাই করে দেখে যে খবরটি ভুয়া ছিল। দ্যা সান মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের বরাতে তাদের গসিপ সেকশনে অবসরের খবর প্রকাশ করে। পরে পল পগবা নিজেই ইস্টাগ্রাম ও টুইটার হ্যান্ডেলে দ্য সান এর প্রতিবেদনকে 'unacceptable fake news' বা অগ্রহণযোগ্য ভুয়া খবর বলে পোস্ট করেন।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
১০. মৌরিতানিয়ান কার্টুনিস্টের সাথে ফরাসি দূতাবাসের চুক্তি বাতিল
গত অক্টোবরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে ইমানুয়েল ম্যাকরনের ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকায় মৌরিতানিয়ায় অবস্থিত ফরাসি দূতাবাস সেই দেশের একজন নামকরা কার্টুনিস্টের সাথে তাদের চুক্তি বাতিল করেছে মর্মে একটি খবর মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে আসে। কিন্তু বুম বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায় খবরটি সত্য নয়।
বুম বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট Khaled Moulay Idris এর ফেসবুক আইডি খুঁজে বের করেছে। নিজের আইডিতে কার্টুনিস্ট নিজে সেসময় একটি বিবৃতি দিয়ে জানান যে, তার সাথে ফরাসি দূতাবাসের কাজের চুক্তি বাতিলের যে খবর ছড়িয়েছে তা সঠিক নয়। বরং চুক্তি বাতিলের ঘটনা ঘটেছে ফরাসি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে। ফরাসি দূতাবাসের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, চুক্তিটি বাতিলের উদ্যোগ মুলত তিনি নিজেই নিয়েছেন।
বুমের প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।