"ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ইউরোপে অনুমোদন" শিরোনামে একটি খবর বাংলাদেশি কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি প্রকাশকারী পোর্টালের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো- rtnews24.net, bartabahok.net, bdbarrta24.com.
প্রতিটি পোর্টালের প্রতিবেদনই হুবহু একই রকম। নিচের স্ক্রিনশটে rtnews24.net এর পুরো প্রতিবেদনটি দেখুন--
খবরটি ফেসবুকে অনেকেই শেয়ার করেছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
খবরটিতে থাকা দুটি দাবি আমি ফ্যাক্ট চেকের জন্য চিহ্নিত করেছি (উপরের স্ক্রিনশটে লাল চিহ্নিত দুটি দাবি লক্ষণীয়)।
১. ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ইউরোপে অনুমোদন পেয়েছে কিনা?
২. ২০০৩ সালে সর্ব প্রথম বাংলাদেশী গবেষক ড. বিজন কুমার এন্টিবডি পরীক্ষার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন কিনা?
প্রথম দাবি:
আলোচ্য সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনামে "ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ইউরোপে অনুমোদন"- এই দাটি করা হলেও প্রতিবেদনের ভেতরে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
বরং প্রতিবেদনের মধ্যেই ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সংবাদমাধ্যমের যে লিংকটি যুক্ত করা হয়েছে তা ইউরোপের একটি ডায়াগনস্টিক ফার্মের (Abbott) অ্যান্টবডি টেস্টে ভালো সাফল্য পাওয়ার এবং এর প্রেক্ষিতে বড় আকারে অ্যান্টবডি টেস্ট পরিচালনা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন পাওয়ার খবর।
Abbott তাদের ওয়েবসাইটে গত ২৭ এপ্রিল এই খবর প্রকাশ করে।
Abbott এর ওয়েবসাইটের ঘোষণার কোথাও বলা হয়নি যে, তাদের এই অ্যান্টবডি টেস্টিং পদ্ধতির উদ্ভাবন বা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের (ডা. জাফরুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত) 'গণস্বাস্থ্য' (কেন্দ্র) এর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা আছে।
এছাড়া Abbott এর ঘোষণার খবর যেসব সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে সেগুলোতেও ডা. জাফরুল্লাহ বা 'গণস্বাস্থ্য' (কেন্দ্র) সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
অর্থাৎ, "ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ইউরোপে অনুমোদন" শিরোনামটি ভুল ও বিভ্রান্তিকর।
কভিড-১৯ শনাক্তকরণে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সম্প্রতি অ্যান্টিবডি টেস্টের জন্য একটি rapid testing kit উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয়, যা পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের ওষধু প্রশাসন গ্রহণ করেছে। যদিও একই ধরনের অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন তৈরি করে কভিড-১৯ শনাক্তকরণের কাজ করে যাচ্ছিল।
Abbott এর ঘোষিত টেস্টের সাথে গণস্বাস্থ্যে উল্লিখিত কিট এর মধ্যে যে সামঞ্জস্য তা হলো উভয়টিই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার পদ্ধতি। কিন্তু এই সামঞ্জস্যের কারণে "ডা. জাফরুল্লাহর গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি" বলার সুযোগ নেই।
দ্বিতীয় দাবি:
বলা হয়েছে- "২০০৩ সালে সর্ব প্রথম বাংলাদেশী গবেষক ড. বিজন কুমার এন্টিবডি পরীক্ষার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন"।
এ দাবিটিও সত্য নয়।
বিভিন্ন ভাইরাস আক্রমণের পর মানবদেহে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার পদ্ধতি ২০০৩ সালের বহু আগে থেকে বিদ্যমান। এ ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি সর্বপ্রথম কবে শুরু হয় সে সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য অনলাইনে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া না গেলেও আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, এইচআইভি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে প্রথম অ্যান্টিবডি পরীক্ষার পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয় ১৯৮৫ সালে।