পিঁপড়ার ছবিটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে ধারণ করা নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি আন্দ্রেয়া হলগাস নামে এক ইতালিয়ান চিত্রগ্রাহক ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি পদ্ধতিতে ধারণ করেছিলেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে ধারণ করা একটি পিঁপড়ার। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর "ريحان فهيم" নামের ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, "ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপে পিঁপড়ার ছবি..." । পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে নয় বরং ক্ষুদ্র জড় অথবা জীবিত বস্তুর বিশেষ চিত্র ধারণ করার জনপ্রিয় পদ্ধতি ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ধারণ করা।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর, 'Massimo' নামের একটি টুইটার হ্যান্ডেলে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০২২ সালের ১১ মার্চ পোস্ট করা হয়েছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়, "This is what an ant's face (Camponotus vagus) looks like very up close. Credits: macro-photo by Andrea Hallgass" অর্থাৎ আন্দ্রেয়া হলগাসের ধারণ করা ক্যাম্পোনোটাস ভ্যাগাস (Camponotus vagus) নামের এক প্রজাতির পিঁপড়ার মুখমন্ডলের ম্যাক্রোফটো।
ম্যাক্রোগ্রাফি কি
Macro Photography বা ম্যাক্রোগ্রাফি ফটোগ্রাফি জগতের অন্যতম জনপ্রিয় ধরণ। সাধারণত কোন ক্ষুদ্র জড় অথবা জীবিত বস্তু যা খালি চোখে মানুষ পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখতে পারেনা তা ম্যাক্রো ফটোগ্রাফির মাধ্যমে জুম করে ধারণ করা হয়। ম্যাক্রোফটোগ্রাফ/ম্যাক্রোছবিতে সাবজেক্টকে তার লাইফ সাইজ বা সাধারণ আকারের তুলনায় ডিটেইল'সহ বৃহৎ দেখা যায়। তবে এর জন্য কোনো ইলেক্ট্রন অনুবিক্ষণ যন্ত্রের দরকার হবেনা। মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে ম্যাক্রোফটোগ্রাফির বিবরণে দেখুন এখানে। অপরদিকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ জীববিজ্ঞানের অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির গঠন নির্ণয় করার ভিন্ন একটি যন্ত্র।
যাইহোক, টুইটারে পোস্টে ছবির একটি উৎস হিসাবে ছবি শেয়ারিং সাইট ফ্লিকারের একটি লিংক যুক্ত করা হয়েছে। লিংকে প্রবেশ করলে আন্দ্রেয়ার ধারণ করা এই ছবিটি সহ একই পিঁপড়ার আরও বেশ কয়েকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির বর্ননায় ছবিটি ধারণ করার যে পদ্ধতি বর্ননা করা হয়েছে, যা সাধারণত ম্যাক্রোগ্রাফির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্লিকারে আন্দ্রেয়া'র ধারণ করা কীটপতঙ্গ/ পোকামাকড়ের আরও অনেক মাক্রোগ্রাফি পদ্ধতির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। দেখুন--
'FLUIDR' নামের আরেকটি ওয়েবসাইটে আন্দ্রেয়া'র ম্যাক্রোগ্রাফি স্টুডিওর যন্ত্রপাতির একটি ছবিও খুঁজে পাওয়া গেছে। যা মোটেই ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে নয় পিঁপড়ার ছবিটি আন্দ্রেয়া ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ধারণ করেছেন।
আন্দ্রেয়া হলগাসের সাথে যোগাযোগের উদ্দ্যেশ্যে সার্চ করার পর, ম্যাক্রোফটোগ্রাফির জনপ্রিয় ফোরাম "photomacrography.net'-এ ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রখ্যাত ম্যাক্রো ফটোগ্রাফার 'Johan J Ingles-Le Nobel' -এর একটি পোস্ট থেকে জানা যায়, আন্দ্রেয়া মারা গেছেন।
সুতরাং ম্যাক্রো ফটোগ্রাফিতে ধারণ করা একটি পিঁপড়ার ছবিকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে ধারণ করা বলে দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।