সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: ভুয়া তথ্য প্রবাহ
কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযোগে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় কী ধরণের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে, এ নিবন্ধে তা খুঁজে দেখা হয়েছে।
কুমিল্লায় নানুয়ার দিঘির পাড়ে স্থাপিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপের মূল অংশের বাইরে দর্শনার্থীদের জন্য স্থাপন করা হনুমান ঠাকুরের কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় গত মাস অক্টোবরের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে, যদিও যাপিত জীবনে এবং সামাজিক মাধ্যমে এর রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। সেসময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপনে নির্মিত পূজামণ্ডপ, তাদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। তন্মধ্যে শুধু চাঁদপুরেই হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন।
কুমিল্লার প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশের তৎপরতায় জড়িতদের এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হনুমানের কোলে কুরআন রাখার ঘটনায় ইকবাল নামের এক 'ভবঘুরে'কে পুলিশ আটক করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২২ অক্টোবর এ সংক্রান্ত দৈনিক প্রথম আলোর খবরের শিরোনাম, "কক্সবাজারে আটক হওয়া ব্যক্তিই কুমিল্লার ইকবাল: পুলিশ"। এই খবরে পুলিশের বরাত দিয়ে ইকবালকে ভবঘুরে বললেও পরদিন ২৩ অক্টোবর পুলিশকে উদ্ধৃতি দিয়েই প্রথম আলোর আরেকটি খবরের শিরোনাম "'ইকবাল ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, সে চতুর'"। ইকবাল ভবঘুরে কি ভবঘুরে নয়, এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা থাকলেও এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা নিয়ে ইকবাল স্বীকারোক্তি দিয়েছে, এ নিয়ে পত্রিকাটির আরেকটি খবরের শিরোনাম, "কোরআন অবমাননার কথা স্বীকার, ঘটনার নেপথ্যে কে বলছেন না ইকবাল"। এছাড়া, ইকবালকে আটক ও তার রহস্যজনক আচরণ নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যমের খবর দেখুন--
ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা ভার্সন: পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় ইকবাল ৭ দিনের রিমান্ডে, পীরগঞ্জে 'উস্কানিদাতা' আটক।
সময় টিভি অনলাইন: মণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় আটক ইকবাল কুমিল্লায়।
কালের কণ্ঠ: পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় ইকবাল সন্দেহে একজন আটক।
হিন্দুস্তান টাইমস্ বাংলা ভার্সন: কুমিল্লার পুজো মণ্ডপে কোরান রাখার কথা স্বীকার করলেও পুলিশি জেরায় 'নীরব' ইকবাল।
দেশ রূপান্তর: আটক ইকবালকে ঘিরে রহস্য।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় ইকবালের সঙ্গে যাদের যোগসূত্র।
একাত্তর টিভি অনলাইন: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা পুলিশ লাইনসে ইকবাল। একাত্তর টিভির এই খবরের সাথে আটক ইকবালের একটি স্পষ্ট ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে। যে ইকবালের ঘটানো ঘটনা নিয়ে এত কিছু ঘটে গেল, তাকে একটু দেখে নিন খবরটির স্ক্রিনশটে--
ইকবাল ছাড়াও এ ঘটনায় যারা ফেসবুকে পোস্ট ও লাইভ করে সামাজিক মাধ্যমে উস্কানি দিয়েছে পুলিশ তাদেরকেও চিহ্নিতপূর্বক গ্রেফতার করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
লক্ষণীয় যে, ওই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক মাধ্যমে পৃথক ভুয়া খবর যেমন প্রচার করা হয়েছে। তেমনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও কেউ কেউ ভুয়া খবর ছড়াতে দেখা গেছে। এই নিবন্ধে সাম্প্রদায়িক সহিসংতা চলাকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহব্যাপী কিভাবে ও কী ধরণের ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে তা তুলে ধরবার চেষ্টা করা হয়েছে। তন্মধ্যে যেসব ভুয়া খবর বা তথ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার মত যা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বাস্তব জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারত এবং বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব ভুয়া খবর চিহ্নিত ও খণ্ডন করে সামাজিক মাধ্যমকে পরিচ্ছন্ন রাখার লড়াই চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
এক.
১৩ অক্টোবর সকালে কুমিল্লায় কুরআন অবমাননার অভিযোগ উঠে। ১৪ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের সামনে বসা গলায় গামছা ঝুলিয়ে রাখা এক ব্যক্তির ছবি প্রচার করে বলা হয়, কুরআন অবমাননায় জড়িত ব্যক্তিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে, "আপনারা শান্ত থাকুন"। এই খবরটি ভাইরাল হয়ে পড়লে বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে কবির নামের এই ব্যক্তি চট্টগ্রাম শহরের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় জাম্বুরা ছুঁড়ে মেরে এক পূজামণ্ডপের প্রতিমার হাত ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগে ১০ অক্টোবর (কুমিল্লার ঘটনা ঘটার তিন দিন আগে) আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদন "চট্টগ্রামে প্রতিমা ভাঙ্গার অভিযোগে আটক ব্যক্তিকে কুমিল্লার বলে দাবি"
দুই.
কুমিল্লার কুরআন অবমাননার ঘটনায় সারাদেশে যখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটছে, ঠিক তখন ১৪ অক্টোবর একটি খবর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে যেখানে বলা হয়, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের একটি জামে মসজিদে কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন! এমন পোস্টের সাথে একটি গ্রাফিক ছবিও ব্যবহার করা হয়। পরে বুম বাংলাদেশের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, ঘটনাটি সাম্প্রতিক নয় বরং ২০১৬ সালের এবং ওই ঘটনার সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ সম্পৃক্তও নয়। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ওই মসজিদে পবিত্র কুরআন বিনষ্টকরণের ঘটনায় তৎকালে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করে পুলিশ। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
তিন.
১৫ অক্টোবর একটি ফেসবুক আইডি থেকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "কুমিল্লায় পুজা মন্ডপে কোরআন শরীফ রেখে আসার ঘটনায় প্রমানসহ গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ-এর শিবির সভাপতি জয়নাল আবেদিনসহ চার শিবির নেতা।" এই দাবির মধ্যদিয়ে একটি রাজনৈতিক পক্ষ কুমিল্লার ঘটনায় অপর একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উপর দায় চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন এখানে--
বুম বাংলাদেশ ছবিগুলো নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ছবিগুলো ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের পৃথক দুটি গ্রেফতারের ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। দেখা গেছে এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুমিল্লার ঘটনার সাথে এসব ছবি ও ব্যক্তির কোন সম্পৃক্ততা নেই। বুম বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন "পুরোনো ছবি পোস্ট করে ভিত্তিহীন প্রচার ফেসবুকে"
চার.
১৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি খবর ভাইরাল হয় যেখানে বলা হয়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একটি হিন্দু পরিবারের মা, মেয়ে, বোনের মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয় এবং এর মধ্যে ১০ বছর বয়সী মেয়েটি মারা গেছে। মুহুর্তেই খবরটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে ধর্ষণ ও ছোট মেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভুয়া। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার, স্থানীয় সাংবাদিক, হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখা খবরটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করে। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের বিস্তারিত প্রতিবেদন, "চাঁদপুরে হিন্দু কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার ভিত্তিহীন খবর ভাইরাল"
পাঁচ.
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মধ্যেই ১৭ অক্টোবর রাতে রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ার বটেরতল গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরদিন ১৮ অক্টোবর একটি ভিডিও ও কিছু স্থিরচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে যেখানে দেখা যাচ্ছে, পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে এবং দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। পোস্টে দাবি করা হয়, রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনা এটি। যেহেতু ১৫ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা উৎসবের দশমী ও শেষদিন ছিল অর্থাৎ ধর্মীয় রীতিতে যেদিন প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। সেহেতু ১৭ তারিখে লাগা রংপুরের আগুনের বলে দাবি করা ওই ভিডিওতে পূজামণ্ডপ ভষ্মিভুত হতে দেখে বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকারদের সন্দেহ হয় এবং অনুসন্ধান শুরু করে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, দমকল বাহিনীর পোশাকের সাথে বাংলাদেশের দমকল বাহিনীর পোশাকের কোন মিল নেই বরং ভারতের দমকল বাহিনীর পোশাকের মিল রয়েছে। এই সুত্র ধরে সার্চ করে বুম বাংলাদেশ দেখতে পায় ঘটনাটি গত ১২ অক্টোবর ত্রিপুরার কমলপুরের মরাছড়া এলাকায় পূজামণ্ডপ ও দোকানপাটে অগ্নিদুর্ঘটনার ভিডিওটি এটি। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদন, "ভিডিওটি ত্রিপুরায় এক অগ্নিকাণ্ডের, রংপুরের পীরগঞ্জে মন্দিরে হামলার নয়"
ছয়.
এরইমধ্যে ১৮ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যমে মুসলিম ধর্মীয় পোশাক পরা রক্তাক্ত এক ব্যক্তির ছবি আপলোড দিয়ে বলা হয়, ছবিটি কুমিল্লার হাফেজ রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির। তবে ছবিটি কোন ঘটনার সে সম্পর্কে কোনো তথ্য না দেয়ায় সাধারণভাবে অনুমিত হচ্ছিল, সেসময়ে চলমান সহিংসতায় পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনার সাথে এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। পরে বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে ছবিটি বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। এছাড়া হাফেজ রবিউল নামের যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে তিনি ওই ব্যক্তি নন, রবিউল মূলত গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর বিরোধী বিক্ষোভের সময় চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বুম বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন, "ছবিটি সাম্প্রতিক নয়, রক্তাক্ত তরুণ হাফেজ রবিউল নন"
সাত.
ফেসবুকে ১৬ অক্টোবর শটগান হাতে এক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে বলা হয়, কুষ্টিয়ায় এক হিন্দু পুলিশ কমকর্তা সৌমেন কুমার রায় প্রকাশ্যে গুলি করে ৬ বছর বয়সী শিশু সহ এক মুসিলম দম্পতিকে হত্যা করেছে। আরো বলা হয়, ছবিতে সৌমেন কুমার রায়কে অস্ত্র হাতে দেখা যাচ্ছে। বুম বাংলাদেশ ছবিটি যাচাই করে দেখে এটি কোন হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা কোন পুলিশ কর্মকর্তারই নয় এবং কোন দম্পতিকে হত্যা করার ঘটনারও নয়। দেখা গেছে, ছবিটি কুষ্টিয়ায় ২০১৫ সালে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরকার দলের দুই পক্ষের মধ্যকার সংঘাতের সময়ের এবং অস্ত্র হাতে ব্যক্তির নাম আনিচুর রহমান ওরফে আনিচ। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকের স্ক্রিনশট দেখুন--
আট.
১৯ অক্টোবর ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিন্দু বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ছবিতে আগুনে একটি ঘর জ্বলতে দেখা যায়। পোস্টে দাবি করা হয়, বাড়ির মালিক পরিমল শ্বশুড় বাড়ি ছিলেন এবং রাত ২টার পর বিদ্যুৎ না থাকায় সাম্প্রদায়িক কারণে অন্ধকারে কেউ ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বুম বাংলাদেশ ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে দাবিটি ভিত্তিহীন। বাড়ির মালিকের নাম পরিমল নয় বরং অনুকূল চন্দ্র রায়। গণমাধ্যমকে অনুকূল জানান, ঘরের ভেতরে স্থাপিত 'কলা পাকানোর চুল্লি' থেকে ঘরে আগুন লাগে এবং বিষয়টি তিনি থানায় পুলিশকে লিখিতভাবেও জানিয়েছেন। বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনটি পড়ুন, "দেবীগঞ্জে হিন্দুবাড়িতে অগ্নি দুর্ঘটনার ভিডিও ভুয়া দাবিতে প্রচার"
নয়.
২৩ অক্টোবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিসহ একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়, ২২ অক্টোবর নোয়াখালীতে বেশকিছু মুসলিম জনতা হিন্দু এলাকায় প্রবেশ করে এক গর্ভবতী নারীকে গণধর্ষণ করে গলা টিপে হত্যা করে। এছাড়াও আরো দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এবং ৩০টির বেশী ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে বলে সেই পোস্টে দাবি করা হয়। বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বুম বাংলাদেশের বিস্তারিত অনুসন্ধানে খবরটি সম্পূর্ণ ভুয়া হিসেবে ধরা পড়ে। এ নিয়ে করা প্রতিবেদনের শিরোনাম, "ছবিটি পুরোনো, নোয়াখালীতে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার খবরটি ভুয়া"
দশ.
এদিকে, গত ২৩ অক্টোবর আর্তনাদ করছেন এমন এক নারীর ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে দাবি করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার ছবি এটি। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
পরে বুম বাংলাদেশ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে এই ছবিটি ২০১৫ সালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় মহাঅষ্টমীর পূণ্যস্নানে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া ১০ পুণ্যার্থীর স্বজনদের আর্তনাদের ছবি এটি। এ নিয়ে বুম বাংলাদেশের প্রতিবেদন, "ছবিটির সাথে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই"।
এই নিবন্ধে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের কোন না কোন স্থানের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবর তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরপরই ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ত্রিপুরার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনার দাবি করে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া খবর, ছবি ও ভিডিও'র ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করা হয়নি।